লাল সবুজ – বাংলাদেশ – আর কিছু ভাবনা


বছর ঘুরে আবারো এলো বিজয়ের সেই দিনটি,


হ্যাঁ, ভালো লাগে,
ভালো লাগে যখন দেখি চারিদিক সেজে উঠেছে লাল সবুজে,
মুক্তির দিনের গান গুলো আবার সবার মুখে মুখে,
বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ভাসছে তারুন্য – সাথে পুরো জাতি.....


এরই মাঝে হঠাৎ মনের ভিতর কিছু অদ্ভুত ভাবনা ঘুরপাক খায়,
মনে হয় ৭১ এর তারুন্যের কথা - ৭১ এর তরুনদের কথা, যারা তাদের তারুন্য শক্তি দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়,
বিনিময়ে রক্ত দিতে যাদের ছিলোনা কোনো কার্পন্য......


এই পর্যন্ত ভাবনাটা ভালোই লাগে...... সত্যই আমার পূর্ববর্তী প্রজন্ম ছিল সাহসী, তাদের দেশ প্রেমে ছিলনা বিন্দু মাত্র ত্রুটি!!


এর পর ভাবনাটা দিক বদলায় -
৭১ এর তারুন্যে আমি যদি সামিল হতে পারতাম – কি হতো -
হয়তো যুদ্ধের প্রাককালেই মারা যেতাম,
নাহলে যুদ্ধে মারা যেতাম – নিজের রক্ত দিয়ে আঁকতাম বাংলাদেশের পতাকা,
তাও হলো না, তবে বীরের বেশে নিজের মা-কে একটা ছোট্ট লাল সবুজ কাপড় তুলে দিয়ে বলতাম – নাও তোমার উপহার!!!!!


ভাবনাটা তখন শুধু ভালো না চমৎকার লাগতে থাকে!!!!


ভাবনা আবার মোড় নেয় -
না, আর নয় কল্পনা, ফিরে আসি বাস্তব ভাবনায়,
চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই রিকশাওয়ালার ছবি, তাঁর অশ্রু ভরা চোখ, তাঁর অবাক করা কথা -
যিনি কোন এক বিজয়ের দিনে আমায় বলেছিলেন তাঁর পরিচয় – সাথে ধিক্কার জানিয়েছিলেন আমায় -
সেই লোকটির কথা -


বিজয়ের দিনে তার হাতে নিউজপ্রিন্টের একটা লাল সবুজ পতাকা তুলে দিতেই বলেছিলেন – তোমরা নতুন প্রজন্ম জানোনা কতটা আমরা ভালোবেসেছি এই পতাকাকে, যার ফসল আজকের দেশ – আজকের স্বাধীনতা - আজকের পরিচয়, নইলে আজ আমি সাধারন মুক্তিযোদ্ধা নিজের পরিচয় লুকিয়ে রিকশা চালাই আর দেশের শত্রুদের গাড়ীতে থাকে লাল সবুজ পতাকা............


ভাবনা আর আগায় না, ভুল আমি আগাতে দেই না,
কিন্তু বিবেক তাকে টেনে নেয় -
ভাবনায় এতোক্ষনের নায়ক আমি চলে যাই ভিলেনের ভূমিকায় -
বিবেক বলে - হ্যাঁ, তুমি বাংলার নতুন প্রজন্ম, তোমার পূর্ববর্তীরা তোমায় কোন পরাধীনতার শৃক্ষলে জন্ম দেয়নি, জন্ম দিয়েছে স্বাধীন মাতৃভূমিতে, আর সেই প্রজন্মের পরের প্রজন্ম তুমি সেসময়ের দেশদ্রোহীদের সামনে মাথা নত করে হেটে যাও …..
আর ভাবো, তাদের কত ক্ষমতা, আমি আর কি!!!!
আর ৭১ এ মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার আকাশ কুসুম ভাবনায় হারিয়ে যাও!!!!!!


আমি বলি - বিবেক , তুমি থামো, আজ আর সেই দিন নেই, আজ ৭১ না।
বিবেক বলে, হায় নির্বোধ, তোমার পূর্ববর্তী রা ছিলোনা তোমার মতো ভীরু কাপুরুষ, যদি তাই হতো, তবে আজ তুমিও জন্ম নিতে কোন পরাধীন মাতৃভূমিতেই.........


আমি বলি , না - বলার কোন অবস্থা আমার আর থাকে না ------
বিবেক , কল্পনা , ভাবনা সব থামিয়ে নেমে আসি বাস্তব জগতে ------


আবার হাঁটা শুরু করি অজানার পথে, শুধু একটা বার মুখ ফুটে বলি আমি বাংলারই সন্তান – বাংলার মাটিতে কোন ভাবেই এই ৩০ লাখ মুক্তিসেনার রক্তকে অপমানিত হতে দেবোনা ----


সামনে তাকিয়ে যখন দেখি অজানা মুখ এসে বলে - ভাই, বিজয়ের মাসে মুখ কালো কেনো - তখন আবার আশায় বুক বাঁধতে মন........

সেই সব আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা.........

শ্রদ্ধা জানাই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবিদের আত্মার প্রতি -


ধিক্কার জানাই সেই সকল বাংলাভাষী ব্যক্তিদের যাদের নীল নকশার ফসল আজকের এই "শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস"


~~


ঘৃণা লাগে নিজেকে, যখন দেখি আজো সেই সব মানুষগুলো বুক ফুলিয়ে লাল সবুজ পতাকাটা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর আজকের প্রজন্মের আমি শুধু নির্বাক চোখে তাকিয়েই রই!!!!!!!

বেসরকারী মেডিকেল-এ ভর্তি নিয়ে


আজ প্রথম আলো খুলতেই খবরটা চোখে পড়লো, যদিও আগেও ব্যপারটা নিয়ে ধারনা ছিল, বিশেষ করে এবার আমার এক আত্মীয় ভর্তি প্রার্থী হওয়ায় কিছু খবর পাচ্ছিলাম এবারের সব কিছু নিয়ে।


সবার মত আমিও জানতাম এবার বেসরকারী মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আইন তৈরি হবে, সে জন্যই সব বেসরকারি মেডিকেলে একযোগে একপ্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঠিক যেমনটি সরকারী মেডিকেল-এ হয়।


আমি নিজেও একটি বেসরকারী মেডিকেলের ছাত্র, আমাদের সময়ে (২০০৪ সালে) ভর্তি প্রক্রিয়া ছিল ভিন্ন, আলাদা আলদা মেডিকেল থেকে ফর্ম কিনে সেসব মেডিকেলের নির্নয় করা নির্ধারিত দিনে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হতো...


ফলাফল প্রকাশের পর সরাসরি চান্স পেলে নির্ধারিত দিনের ভিতর অর্থ জমা দিয়ে ভর্তি হতে হতো, কথাটা শুনতে খুব সাধারন শুনালেও সেই 'অর্থ' শব্দের মধ্যেই সকল রহস্য নিহিত!




আমাদের সময়ের কথা বলি, প্রথম সারির বেসরকারী মেডিকেল গুলোতে আমাদের সময় এককালীন জমা দিতে হতো ৪.৫ থেকে ৫ লাখ টাকা, (যদিও বাংলাদেশ মেডিকেল এর ক্ষেত্রে অর্থের অংকটা সবসময়ই কিছু বেশি থাকতো); আর মাসিক কোথাও হাজার ২, কোথাও বা হাজার ৩।






সময় বদলেছে - মাঝে কেটে গেছে ৫টি বছর, আজ সেই এক অংকের সংখ্যা পৌছে গেছে দুই অংকে (এককালীন এবং মাসিক-উভয় ক্ষেত্রেই)... উচ্চারন করা কোনো ব্যপার না হলেও বহন করা সম্ভব না।
একটু ভেবে দেখুন, সেসময়ে যারা সবাই ভর্তি হতে পেরেছিল, আজ যদি তারা সেই ভর্তির লিষ্টে থাকতো, সকলের পক্ষে কি ভর্তি হওয়া সম্ভব হতো????
(উত্তর সকলেরই জানা, নতুন করে বলার কিছু নেই)


পত্রিকার লেখায় পেলাম, এবার নাকি অর্থের ব্যপারে নীতিমালা প্রনয়নের কথা ছিল, যদিও অজ্ঞাত কারনে সেটা আর অয়ে উঠেনি, বরং হয়েছে উল্টোটি, আগে যে মেডিকেল এককালীন যে অর্থ নিতো এবার সবাই সেটা বাড়িয়ে নিচ্ছে!!! (অদ্ভুত!!)


মেডিকেল এর মানের কথা বলতে গেলে, ব্যক্তিগত ভাবে আমি সন্তুষ্ট(নিজের মেডিকেল এর ক্ষেত্রে, কেননা হাসপাতাল হিসেবে বারডেম বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিকিৎসালয়ের একটা, এবং এখানে পর্যাপ্ত রোগী শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের জন্য সব সময়ই পাওয়া যায়,আর সরকারী নীতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত ফ্রী বেড থাকায়, সকল ধরনের রোগীর সংস্পর্শে আসা সম্ভব হয়)... জানিনা সকল বেসরকারী মেডিকেল-এ সমরূপ সুবিধা পাওয়া যায় কিনা!


আমাদের দেশের সকল মানুষের জন্য চিকিৎসা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যদি সরকারের হয়, তবে মান নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব ও তাদেরই, সেকারনে বেসরকারী মেডিকেল এ ভর্তির জন্য অর্থ নিয়ন্ত্রন করা উচিত, তাছাড়া, ভবিষ্যতে সম মান নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নাও হতে পারে!
আর, বর্তমানে যেভাবে চিকিৎসকদের দুর্নীতির কথা শোনা যায় (যা কিনা সব সময় সত্য নয়, কেননা অনেক অনেক ত্যাগী চিকিৎসক আমাদের দেশেই আছেন,যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয়না!) তা ভবিষ্যতে সত্যিই অনেক বেড়ে যাবে।(হয়তো তার কুফল এক দিনে আসবে না ১০ -১৫ বছর পর যা পাওয়া যাবে)


আমার মতে, সরকারের উচিত অতি দ্রুত বিষয়টি আমলে নেয়া।



পাখি পাখি পাখি আর পাখি............


এবার ঈদে দাদা বাড়ী যাওয়ার পথে প্রচুর জ্যামের কবলে পড়েছিলাম.... সময় লেগেছিল সাধারন সময়ের প্রায় দ্বিগুণ, আর ফেরী ঘাটে (পাটুরিয়া) তো ২.৫ ঘন্টার উপর লেগে গেলো.... (যদিও কাকতালীয় ভাবে সেখানে কলেজের এক ছোট ভাই আর গোটা ২ স্কুলের বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার আড্ডা ভালই জমেছিল একটা চায়ের দোকানে, তাই সময় খুব খারাপ গেছে বলা যায় না.....)


যাই হোক, দাদা বাড়ী পৌছুতে পৌছুতে রাত... আর শরীর জুড়ে ক্লান্তি......
তাই দেরী না করেই ঘুম.... সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই পাখির কিচিরমিচির..... (অবশ্য গ্রামে এটা খুবই স্বাভাবিক... কিন্তু শব্দটা খুব বেশিই লাগছিল)
ক্লান্তি আর অলসতায় তখন ঘুম থেকেও ওঠা হয়নি, তাই বুঝিও নাই ব্যপারটা...
অবশ্য সন্ধ্যা হতে হতেই ঘটনা পরিষ্কার হয়ে উঠলো।
রাতে আমার দাদা বাড়ীর উপরে আশ্রয় নেয় প্রায় লাখ খানেক পাখি, ভোর হতেই আবার চলে যায়, আমাদের বাড়ীতে কেউ পাখির কোন ক্ষতি করে না বলে (ক্ষতি বলতে, ঢিল ছোঁড়া থেকে শুরু করে গুলি করে পাখি মারা) তারা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে এটা বেছে নিয়েছে...


সন্ধ্যা থেকেই ক্যামেরায় কিছু ছবি নেয়া শুরু করলাম, কিন্তু যেহেতু বেশ দূরের ছবি নিতে হয়েছে, তাই সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরায় আর খুব ভালো কিছু তোলা যায়নি, হয়তো ডিএসেলআর হলে ভালো তোলা যেতো.....


যাই হোক, কিছু ছবি শেয়ার করছি....
(ছবিগুলো ছোট আকারে আছে এখানে... অবশ্য আমার কাছে ১০মেগা পিক্সেই ছবি গুলো আছে...)






Photobucket


Photobucket


Photobucket
আকাশে উড়ন্ত পাখি


Photobucket
গাছে বসা পানকৌড়ি


Photobucket
গাছে বসা বক


Photobucket
সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ আর পাখি


পাখি সম্বন্ধে জ্ঞান খুব বেশি না, তাই সাধারন লোকজনের কাছ থেকেই যা জানলাম – কালো পাখি গুলো পানকৌড়ি, আর সাদা গুলো বক, কেউ কেউ আবার বলে ওগুলো সারস.....


শেষ কথা, হয়তো মানুষই এ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাণী, যেই পাখি দের কে আশেপাশের মানুষদেরকে বুঝিয়ে আঘাত না করে রাখা হয়েছে, রাতে (বেশ রাতে ১১ – সাড়ে ১১টার দিকে - গ্রামে ওটাই খুব রাত) কারা যেন বিশেষ পদ্ধতিতে আঘাত করেছিলো... হঠাত রাতে অনেক পাখি আকাশে উড়ে যায়... তাকিয়ে দেখি চাঁদের আলোতে আকাশে হাজারো পাখি.... (খারাপই লাগছিল, মানুষ নিজেরাই যদি এমন আচরন করে সাধারন প্রাণীদের সাথে......)
পরে অবশ্য কিছু লোক আলো হাতে সেদিকে গিয়ে দেখে ৩-৪ জন দৌড়ে যাচ্ছে (এটা বলা আবশ্যক আমাদের দাদা বাড়ীতে অর্থাৎ সেই গ্রামে এখনও বিদ্যুত পৌছায়নি)..... আর সম্ভব হয়নি তাদেরকে চেনা বা ধরা.......


যাই হোক, এভাবে হাজারে হাজারে - লাখ খানেক পাখি দেখে সত্যিই চমৎকার লাগলো।

Copyright © 2009 - সার্জা'র ব্লগ - is proudly powered by Blogger
Smashing Magazine - Design Disease - Blog and Web - Dilectio Blogger Template